সংগ্রাম থেকে সাফল্যে: মেরি শেলির ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ সৃষ্টি এবং সাহসিকতার গল্প – NariBangla

সংগ্রাম থেকে সাফল্যে: মেরি শেলির ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ সৃষ্টি এবং সাহসিকতার গল্প

Comment

stardom
মেরি শেলি

আজকের দিনটি মেরি শেলির জন্মদিন। তিনি এমন একজন নারী যিনি তার সাহিত্যের প্রতিভা এবং সাহসী ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। মেরি শেলি শুধু “ফ্রাঙ্কেনস্টাইন” উপন্যাসের স্রষ্টা নন, বরং তার ব্যক্তিগত জীবন, সংগ্রাম, প্রেম, দুঃখ এবং আত্ম-অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন আধুনিক নারীদের জন্য এক মহান প্রেরণা। আসুন, জেনে নেওয়া যাক তার জীবনের গল্প এবং কীভাবে তার জীবন আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

মেরি শেলির শৈশব এবং পারিবারিক প্রেক্ষাপট

মেরি শেলি ১৭৯৭ সালের ৩০শে আগস্ট লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা উইলিয়াম গডউইন ছিলেন একজন প্রখ্যাত দার্শনিক এবং মা মেরি ওলস্টোনক্রাফট ছিলেন নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। মাত্র ১১ দিন বয়সে মেরি তার মাকে হারান। তার মা মেরি ওলস্টোনক্রাফট “A Vindication of the Rights of Woman” গ্রন্থের মাধ্যমে নারীদের অধিকার ও সমতার পক্ষে কথা বলেছিলেন, যা পরবর্তীতে মেরি শেলির চিন্তা ও জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

প্রেম এবং বিয়ে: সাহসিকতার উদাহরণ

মাত্র ১৬ বছর বয়সে, মেরি শেলির জীবন এক নতুন মোড় নেয় যখন তিনি বিখ্যাত কবি পার্সি বিসি শেলির প্রেমে পড়েন। তাদের প্রেম সমাজের চোখে অপ্রত্যাশিত এবং বিতর্কিত ছিল। পার্সি শেলি তখন বিবাহিত ছিলেন, কিন্তু তারা দুজনেই ভালোবাসার জন্য সমাজের সকল বাঁধা অতিক্রম করে পালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে বিয়ে করেন।

এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সাহসিকতার উদাহরণ নয়, বরং আধুনিক নারীদের জন্য একটি শিক্ষা যে, জীবনে নিজের পথ বেছে নেওয়া এবং সেই পথে চলার সাহস থাকা জরুরি। ভালোবাসার জন্য নিজের ইচ্ছা ও মূল্যবোধের ওপর স্থির থাকাই মেরি শেলির অন্যতম বড় গুণ।

সাহিত্যিক প্রতিভা এবং “ফ্রাঙ্কেনস্টাইন” এর সৃষ্টি

মেরি শেলি ১৮১৬ সালে “ফ্রাঙ্কেনস্টাইন” উপন্যাস লিখেছিলেন, যা তাকে সাহিত্যের জগতে অমর করে তুলেছে। “ফ্রাঙ্কেনস্টাইন” শুধুমাত্র একটি হরর উপন্যাস নয়; এটি মানুষের মনোবিজ্ঞান, সৃষ্টির দায়িত্ব এবং নৈতিকতার প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার একটি প্ল্যাটফর্ম। এই উপন্যাসের মাধ্যমে মেরি শেলি আমাদের দেখিয়েছেন যে, নারী হওয়া মানেই শুধুমাত্র গৃহস্থালির কাজ করা নয়; বরং তারা নিজেদের মেধা এবং সৃজনশীলতায়ও বিশ্বকে বদলে দিতে পারে।

কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে সংগ্রাম

মেরি শেলির জীবনে দুঃখের মুহূর্ত কম ছিল না। তিনি একের পর এক সন্তান হারিয়েছেন, তার স্বামীর অকাল মৃত্যু দেখেছেন, এবং অনেক সামাজিক কটূক্তির সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনোই হাল ছাড়েননি। কঠিন সময়ের মধ্যেও তিনি লিখতে থাকেন এবং তার জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তকে সাহস ও স্থিরতার সাথে গ্রহণ করেন।

এই বিষয়টি আধুনিক নারীদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। জীবনে কঠিন সময় আসবেই, কিন্তু সেই সময়গুলোই একজন নারীকে আরও শক্তিশালী এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মেরি শেলির মতো, আমাদেরও উচিত জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে সাহসের সাথে মোকাবিলা করা।

প্রেরণাদায়ী দৃষ্টিভঙ্গি এবং আধুনিক নারীদের জন্য শিক্ষা

মেরি শেলির জীবন আধুনিক নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি দেখিয়েছেন যে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই সাহসিকতা, স্বাধীনতা, এবং আত্ম-অনুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নারীদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তার জীবনের গল্প আমাদের শেখায় যে, জীবনে নিজের লক্ষ্য স্থির করা এবং সেই লক্ষ্যে অটল থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

মেরি শেলির জীবন আধুনিক নারীদের জন্য প্রেরণার এক মহৎ উদাহরণ। তার জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সাহস, শক্তি, এবং স্বাধীনতা কোনো নির্দিষ্ট সময় বা প্রেক্ষাপটের জন্য নয়; এগুলি প্রতিটি নারীর অন্তর্নিহিত গুণ, যা তাদের জীবনে সাফল্য এনে দিতে পারে।

শেষ কথা

মেরি শেলির জীবন এবং কর্ম আধুনিক নারীদের জন্য এক বিশাল প্রেরণার উৎস। তার জীবনের গল্প থেকে আমাদের প্রত্যেকের শেখার আছে যে, সমাজের বাঁধা পেরিয়ে নিজের লক্ষ্যে অটল থাকা এবং নিজের স্বপ্ন পূরণে কখনোই পিছপা না হওয়া জরুরি। আজকের দিনে, মেরি শেলির জন্মদিনে আমরা তার সাহসিকতা, সংগ্রাম এবং সাফল্যের গল্প থেকে প্রেরণা নিতে পারি এবং আমাদের জীবনে সেই গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

//GA Code Start //GA code end