ব্যাকলেস পোশাকে আকর্ষণীয় দেখাতে পিঠের যত্ন – NariBangla

ব্যাকলেস পোশাকে আকর্ষণীয় দেখাতে পিঠের যত্ন

4 Replies

Lifestyle

আশে পাশে সবাই ব্যাকলেস পোশাক পরছে।  সে ইচ্ছে আপনারও আছে। ইচ্ছে পূরণ করতে কিছুদিন আগে মনের মত একটা ব্যাকলেস ব্লাউজও বানিয়েছেন। কিন্তু পিছনের ওই পিঠটা নিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস কম। কতটা আকর্ষণীয় ওই পিঠ। ব্যাকলেস পরলে কেমন লাগবে। আপনার জন্য, ব্যাকলেস পোশাকে আকর্ষণীয় দেখাতে পিঠের যত্ন।

আগে মনে করা হত ব্যাকলেস শুধু তামাটে বা স্লিম শরীরের মেয়েদের জন্য। এখন আর তামাটে বা স্লিম শরীরের প্রয়োজন নেই। ক্যারি করতে পারলেই হলো! এটি সার্বিক অর্থেই পার্টির পোশাক। সাধারণত সান্ধ্য পার্টি কিংবা বিয়ের বিশেষ পোশাক তৈরিতে এ ধরনের কাট ব্যবহার করা হয়।

ব্যাকলেস পোশাকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, পুরো পিঠ থাকবে ফাঁকা, পেছন থেকে দেখলে মনে হবে সামনের দিকে পোশাকটি শূন্যে ঝুলে আছে। তবে,কতোটুকু পিঠ খোলা থাকবে এটি নির্ভর করে ডিজাইনের ওপর। কিছু পোশাকে পিঠের উপরের এবং মাঝের অংশ খোলা থাকে, যাতে বিউটিবোন দৃশ্যমান হয়; আবার কিছু পোশাক উন্মুক্ত থাকে প্রায় নিতম্ব পর্যন্ত। আমাদের ফ্যাশনে ব্যাকলেস ব্যবহৃত হয় নানাভাবে। তবে তা কিছুটা পরিবর্তিত এবং অবশ্যই পরিমার্জিত রূপে। বিশেষ করে ব্লাউজ ও কামিজের কাটে এর প্রভাব বেশি। সেই সঙ্গে গাউন তো আছেই। শাড়ি ও ঘাগরার সঙ্গে পরিধেয় এ পোশাকটিতে পিঠ সম্পূর্ণ বা আংশিক খোলা থাকে।

ব্লাউজ বেছে নিন শরীরের গঠন অনুযায়ী

তবে সবার জন্য নয় এটি। এর জন্য দরকার নিখুঁত দেহকাঠামো, সফিস্টিকেশন এবং রুচির প্রয়োগ। নইলে পোশাকটিকে অশ্লীল মনে হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে এই সময়ের নায়িকা বিদ্যা বালানের কথাও বলা যেতে পারে। ইদানীং ব্যাকলেস ব্লাউজ জনপ্রিয় হওয়ার ক্ষেত্রে তার একটি বিশাল ভূমিকা আছে। এ নিয়ে বিদ্যা চমৎকার একটি মন্তব্যও করেছেন। বলেছেন, ‘আমি মনে করি, শাড়িতে নিজেকে সেক্সি করে তোলার কাজে প্রাধান্য থাকে আঁচল ও ব্লাউজের। আমি সব সময় আমার ব্লাউজের কাট লো করে থাকি, যাতে পিঠ খুব ভালোভাবে দেখা যায়।কারণ, আগাগোড়া ঢাকা এত লম্বা কাপড়ের মধ্যে একটু স্কিন শো ভালই লাগে!’

ব্লাউজে ব্যাকলেসের ট্রেন্ড আসলে অনেকটা সে কারণেই। যদিও আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাকলেস মানে পুরোপুরি উন্মুক্ত পিঠ দেখানো নয়। পেছনে ডিপ স্কয়ার, রাউন্ড, হার্টশেপ এবং ভি কাটের মাধ্যমে ব্যাকলেস করে তোলা হয় ব্লাউজ কিংবা কামিজটিকে। লো কাট ব্লাউজের জনপ্রিয়তাই বেশি। এ ধরনের কাটে আংশিক উন্মুক্ত থাকে পিঠ, কখনো-সখনো পুরোপুরিও উন্মুক্ত থাকে ঝুল ফিতার মাধ্যমে। কামিজের ক্ষেত্রে হয়তো পিঠে বড় একটি হার্ট বা পেছনের গলার কাটটি তুলনামূলকভাবে অনেক গভীর করা হয়।

মুখের ত্বকের যত্নের জন্য আমরা যতটা সময় ব্যয় করি, তার থেকে কিছুটা কম সময়েই পেতে পারেন আকর্ষণীয় পিঠ। ব্যাকলেসে মধ্যমণি আপনিই।

ব্যাকনে থেকে মুক্তি মুখে নয়, পিটেও হতে পারে অ্যাকনের সমস্যা। আর পিঠে অ্যাকনের সমস্যাকেই পোশাকি ভাষায় বলে ব্যাকনে। আপনি টিনএজার হোন বা প্রাপ্তবয়স্ক, পিঠে অ্যাকনের সমস্যা কিন্তু রাতের ঘুম ছুটিয়ে দিতে পারে। আর অভিজ্ঞদের মতে, মুখে ব্রণর সমস্যার থেকেও নাছোরবান্দা এই ব্যাকনে। পিঠে থাকা সেবাকিয়াস গ্রন্থি থাকে, তার ক্ষরণ বেশি হলেই অ্যাকনে হয়। তবে পিঠে অ্যাকনের মোকাবিলায় মেনে চলতে পারেন কয়েকটি সাধারণ রূপচর্চার টিপস।

পিঠের যত্নে সাধারণ টিপস

প্রথমেই বেছে নিন সঠিক বডি ওয়াশ। আপনার ত্বকের জন্য যেমন আপনি সঠিক ফেস ওয়াশ ব্যবহার করেন, তেমনই পিঠ ও শরীরের জন্য বেছে নিন সঠিক বডি ওয়াশ। খেয়াল রাখবেন, আপনার বডি ওয়াশে যেন এমন কিছু উপাদান থাকে যা পিঠের অ্যাকনের সঙ্গে লড়তে উপযুক্ত। খুব ভাল হয় যদি অ্যান্টইক্সিডেন্টযুক্ত বডি ওয়াশ বেছে নেন। কিছু কিছু বডি ওয়াশ পিএইচ লেভেলের মাত্রা ব্যালেন্সড রাখে। এগুলোও কিন্তু ব্যাকনের মোকাবিলায় আদর্শ।

হাইজিন বজায় রাখা খুব জরুরি। জিম থেকে ফিরে আলস্য করে বসে থাকলেন, বা বৃষ্টিতে ভিজে এসে স্নান করলেন নাএগুলো মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। ঘাম ও ভিজে, স্যাঁতসেঁতে ভাব অ্যাকনের ব্যাকটিরিয়ার বধ্যভূমি। তাই, জিম থেকে ফিরে, বৃষ্টিতে ভিজে এসে বা বাইরে থেকে ঘুরে এসে অবশ্যই স্নান করুন।

স্নানের সময় এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়ে যাবে। ব্লকড পোরগুলোও খুলে যাবে। স্নানের সময় বডি স্ক্রাবিং নতুন কোষ তৈরি হতে সাহায্য করে। যে স্ক্রাবে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড আছে, সেই স্ক্রাব বেশি উপযোগী।

ঘরোয়া যত্ন ছাড়াও মাঝেমধ্যে আপনি নিশ্চয়ই সালঁতে যান ফেশিয়াল করাতে? ঠিক সেরকমই পিঠের ডিপ ক্লেনজ়িংয়ের জন্য পারলার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। সালঁতে গিয়ে ব্যাক মাসাজ নিন। এতে পিঠে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। পিঠের ত্বকও হয়ে ওঠে গ্লোয়িং আর উজ্জ্বল! বাড়িতেও ক্লে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। এতে পিঠের ত্বকের বন্ধ হয়ে যাওয়া ছিদ্র (ক্লগড পোরস) খুলে যায়। ত্বক আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে।

যদি আপনার লম্ব চুল হয়, তাহলে তা পিঠের সংস্পর্শে আসবেই। সেক্ষেত্রে চুল সবসময় পরিষ্কার রাখবেন। এমন অনেক হেয়ার প্রডাক্ট আছে, যেগুলো ত্বকের পোরস বন্ধ করে দেয়। ত্বক তৈলাক্তও হয়ে যেতে পারে। তাই, ময়েশ্চারাইজ়ার সেরাম ব্যবহার করার সময় মাথায় রাখবেন তা যেমন শুধু আপনার চুলের উপযুক্তই নয়, ত্বকেরও উপযুক্ত হয়। বাইরে রোদে বা ধুলোময়লায় লো কাট ব্লাউজ় বা হল্টার নেক পড়লে, চুল বেঁধে রাখাই ভাল।

 

সেক্সি পিঠের জন্য যত্ন

পিঠের যত্নের জন্য যে বিউটি ট্রিটমেন্টই করুন না কেন, শুরুতেই হালকা গরম জলে স্নান করবেন। ঈষদুষ্ণ জল বন্ধ হওয়া পোরসগুলোয় জমে থাকা ময়লা বের করে আনবে। চেষ্টা করুন পিঠে গরম ধোঁয়া লাগানোর (হট স্টিম)। এতে পিঠে জমে থাকা ময়লা আরও সহজে বেরিয়ে আসবে। পিঠেও কিন্তু ব্ল্যাকহেডস হতে পারে। স্টিম নিলে ব্ল্যাকহেজস থেকেও মুক্তি পাবেন। ফলে, পিঠের ত্বক হয়ে উঠবে আরও উজ্জ্বল ও গ্ল্যামারাস।

পিঠ আমাদের শরীরের অন্যতম অবহেলিত অংশ। মুখ বা হাতের যতটা যত্ন আমরা করি, পিঠের ততটা যত্ন আমরা কেউই নিই না। ফলে পিঠে মৃতকোষ, ব্ল্যাক হেডস আর ময়লা জমতে থাকে। তাই ভাল বডি স্ক্রাব অবশ্যই ব্যবহার করবেন। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে ব্যাক পলিশ করাতে পারেন। বড় দাঁড়ার ব্রাশ পিঠে বুলিয়ে নিন। শুকনো অবস্থায় ব্যাক ব্রাশিং কিন্তু ত্বকের মরা কোষ ধরিয়ে ফেলতে উপযোগী। অ্যাকনের সমস্যার থাকলে মাইল্ড ক্লেনজ়ার ব্যবহার করুন।

স্ক্রাবিংয়ের পরে ময়েশ্চারাইজ় করুন। খুব ভাল হয় যদি অভিজ্ঞ কারওর কাছে ব্যাক মাসাজ করান। আমন্ড, অলিভ বা জোজোবা তেল দিয়ে ব্যাক মাসাজ করতে পারেন। এতে পিঠের ত্বক নরম তো হবেই, মসৃণও হয়ে উঠবে। আর পিঠের রক্ত সঞ্চালন বাড়লে ত্বকের ঔজ্জ্বল্যও বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।

উজ্জ্বল পিঠের সৌন্দর্য তখনই বোঝা যাবে যখন পিঠের আকার হবে ঈর্ষণীয়! টোনড পিঠ পেতে তাই নিয়মিত এক্সারসাইজ় করুন। প্ল্যাঙ্ক বা পুশ আপ করতে পারেন। যদি এতটা হেভি এক্সারসাইজ়ে অভ্যস্ত না হন তাহলে যোগাসনও করতে পারেন। পিলাটিসেও পিঠের মেদ ঝরে।

পার্টিতে বা কোনও অনুষ্ঠানে ব্যাকলেস পরে যাবেন ভাবলে পিঠের যথাযথ মেক-আপও প্রয়োজন। যতটা সময় নিয়ে আমরা মুখের মেক-আপ করি, তার কিছুটা যদি পিঠের জন্য ব্যয় করা যায়, তাহলে পার্টিতে আপনার পিঠ থেকে চোখ ফেরাতে পারবেন না কেউই! পিঠে বডি ফাউন্ডেশন লাগান। এরপরে হালকা কমপ্যাক্ট পাউডার লাগিয়ে নিন। আপনার কমপ্লেকশন অনুযায়ী প্রডাক্ট বেছে নেবেন। পিঠে যদি দাগছোপের সমস্যা থাকে তাহলে অল্প কনসিলার ব্যবহার করুন। আর শেষে লাগান ব্রনজ়ার। ব্যস, সেক্সি পিঠ পেতে আর বিশেষ কসরত্‌ করতে হবে না।

যে ধরনের ব্লাউজ আপনার পছন্দ

ব্যাক লেস পরার কিছু নিয়মকানুন আছে-  কামিজ, চোলি, ব্লাউজ বা গাউন, যা-ই পরা হোক না কেন, তাতে খোলা পিঠের সঙ্গে আবৃত সম্মুখভাগের ভারসাম্য থাকতে হবে। শরীরের সামনের অংশ যেন খুব বেশি জমকালো না হয়। বড় হার কিংবা গর্জিয়াস বড় দুল একেবারেই মানায় না এর সঙ্গে। শুধু ব্যাকলেস জামা পরেই হয়ে ওঠা যায় দারুণ ফ্যাশনেবল। সঙ্গে এক জোড়া সাধারণ জুতা এবং ছোট্ট একটি পার্স। বেস্ট হেয়ারস্টাইল হতে পারে খোঁপা বা বেণি। অনুষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে খোলা চুলের ক্যাজুয়াল লুকও চলতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে চুল সামনে এনে এক পাশে ফেলে রাখলেই ভালো লাগবে। খোলা পিঠই যেখানে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, তা যতোটা প্রদর্শন করা যায় ততোই ভাল।
 

4 comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

//GA Code Start //GA code end